সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫২ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
গত এক দশক ধরে ইরানে ঘটে যাওয়া রহস্যজনক বিষ প্রয়োগ, গাড়ি বোমা হামলা, গুলাগুলি ও নাশকতার পর সর্বশেষ সংযোজন ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদে হত্যাকাণ্ড। যেটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ইরানি মিডিয়া জানিয়েছে, ঘটনার দিন ফখরিজাদেহ ইরানের অ্যাবসার্ড শহরে তার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছিলেন। এসময় তার সাথে নিরাপত্তারক্ষীদের একটি দলও ছিল।
হঠাৎ চৌরাস্তায় একটি নিশান গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় বিদ্যুৎ লাইন ধ্বসে পড়ে। এসময় ফাখরিযাদের হুন্দাই সান্তা ফিয়ে গাড়িতে থাকা নিরাপত্তা কর্মীরা বেরিয়ে আসে ও নিরাপত্তা থাকা আরো একটি দল মোটর সাইকেলে করে উপস্থিত হয়। এসময় সেখানে আগে থেকেই উৎ পেতে থাকা ১২ সদস্যের একটি ঘাতক দল এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এমনটাই জানিয়েছেন ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র নির্মাতা জাভেদ মোগৌই।
ফাখরিযাদের শরীরে তিনটি গুলি লেগেছিল। তিনি গাড়ি থেকে পড়ে গেছিলেন এবং রাস্তায় তার রক্ত লেগেছিল। পাশের হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল। আর রাস্তার ক্যামেরাগুলোও কাজ করছিল না, ফলে ১২ গুপ্ত ঘাতক বিনা বাধায় এলাকা ত্যাগ করে। উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার ফাখরিযাদেকে উদ্ধার করে তেহরানের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
জাভেদ মোগৌই তার একাউন্টে লিখেন, এটা অনেকটা হলিউডের একশন মুভির মতো।
এসব হামলা বেশিরভাগই ঘটে থাকে পরমাণু কর্মসূচীতে জড়িতদের সাথে। আর এর সবগুলোর পেছনে ইরানের কঠিন প্রতিপক্ষ ইসরাইলের হাত রয়েছে বলে মনে করা হয়।
২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ইরানের চারজন পরমাণু বিজ্ঞানী আততায়ীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন এবং এইসব হত্যার ঘটনায় ইসরাইল জড়িত বলে ইরান অভিযোগ করেছে।
তবে, ২০২০ সালে ইরান যে পরিমাণ গুপ্তহামলা শিকার হয়েছে অন্য কোন সময় তা ঘটেনি। ইরানের এই শীর্ষ বিজ্ঞানীকে হত্যার মধ্যদিয়ে দেশটির দৈন্যতা আবারো প্রকাশিত হলো। এর আগে গত জানুয়ারিতে ইরাক সফরে যাওয়া দেশটির শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা কাসেম সোলাইমানি মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছিলেন। তাকেও যথাযথ নিরাপত্তা দিতে পারেনি ইরান। এরপর গেল আগস্টে ইরানে থাকা শীর্ষ আল কায়দা কামান্ডারকে তেহরানের রাস্তায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে ইসরাইলি গোয়েন্দারা। এবার দেশের ভেতরেই খোদ রাজধানীর পাশেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন আরেক শীর্ষ বিজ্ঞানী। এর ফলে নিজ দেশের ভেতর ইরান কতটা অরক্ষিত তা আরো একবার প্রকাশ হলো।
এসব হামলার চালানোর সময় ইরানের পক্ষ থেকে কোন ধরনের প্রতিরোধ করারও ক্ষমতা ছিল না। শত্রু দেশের ভেতরে ঢুকে এতবার সফল হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ইসরাইল হয়তো বেশ এগিয়ে থাকবে।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস